পুকুরের নিচে লুকানো রহস্য । ভূতের গল্প

                                         

পুকুরের নিচে লুকানো রহস্য
পুকুরের নিচে লুকানো রহস্য

শ্রাবণ মাসের এক কালো রাত। আকাশে মেঘের গর্জন, আর বৃষ্টির ফোঁটা মাটিতে পড়ে একটা অদ্ভুত শব্দ তুলছে। গ্রামের এক কোণে, যেখানে পুরোনো আমবাগানের পাশে একটা বড় পুকুর আছে, সেখানে কেউ যেতে চায় না। গ্রামের বুড়োরা বলে, এই পুকুরে নাকি একটা অভিশপ্ত আত্মা বাস করে। অনেক বছর আগে, এই পুকুরে একজন যুবকের মৃত্যু হয়েছিল। তার নাম ছিল শ্যামল। গ্রামের লোকেরা বলে, শ্যামলকে তারই প্রেমিকা মালতী ঠকিয়ে এই পুকুরে ডুবিয়ে মেরেছিল, শুধুমাত্র তার পরিবারের সম্পত্তি হাতানোর জন্য। তারপর থেকে শ্যামলের আত্মা এই পুকুরে আটকে আছে, আর যে কেউ রাতের বেলা এখানে যায়, তাকে সে ছাড়ে না।

এই গল্পের নায়ক হলো রনি। রনি একজন স্কুল শিক্ষক, বয়স ৩০। সে গ্রামে নতুন এসেছে, আর এইসব গল্পে তার বিশ্বাস নেই। তার এক ছাত্র, সুমন, তাকে পুকুরের গল্পটা বলে আর চ্যালেঞ্জ করে, "স্যার, আপনি যদি সত্যি ভূতে বিশ্বাস না করেন, তাহলে আজ রাতে পুকুরের ধারে গিয়ে একটা ছবি তুলে আনুন।" রনি হেসে বলল, "ঠিক আছে, আমি যাব। এসব ভূত-প্রেত কিছুই নেই।"

রাত ১১টার দিকে রনি একা পুকুরের দিকে রওনা দিল। তার হাতে একটা টর্চ আর মোবাইল ফোন। পুকুরের কাছে পৌঁছতেই সে একটা অদ্ভুত ঠান্ডা বাতাস অনুভব করল। পুকুরের পানি কালো, আর তার মধ্যে যেন কিছু ছায়া নড়ছে। রনি ভাবল, এটা তার মনের ভুল। সে ফোনটা বের করে একটা সেলফি তুলল। কিন্তু ছবিটা দেখে তার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেল। ছবিতে তার পেছনে একটা ছায়া ছিল—একটা লোক, ভেজা কাপড় পরা, তার চোখ দুটো সাদা, আর মুখে একটা ভয়ানক হাসি।

রনি দৌড়ে পালাতে গেল, কিন্তু তার পা যেন মাটিতে আটকে গেছে। পেছন থেকে একটা ফিসফিস ভেসে এলো— "তুমি এখানে কেন এসেছ?" রনি ঘুরে তাকাতেই দেখল, পুকুরের পানি থেকে একটা আকৃতি উঠে আসছে। সেটা শ্যামল। তার হাতে একটা ভাঙা শিকল, আর তার চোখ দুটো যেন রনির দিকে তাকিয়ে আছে।

রনি চিৎকার করার চেষ্টা করল, কিন্তু তার গলা থেকে কোনো শব্দ বের হলো না। শ্যামল ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো, আর তার মুখের হাসি আরও চওড়া হলো। সে বলল, "মালতী আমাকে এখানে ফেলে গেছে। আমি তাকে খুঁজছি। তুমি কি তাকে দেখেছ?" রনি কাঁপতে কাঁপতে বলল, "আমি জানি না কোনো মালতীকে!" শ্যামল হঠাৎ চিৎকার করে উঠল, "তুমি মিথ্যা বলছ! সবাই মিথ্যা বলে!" তারপর সে রনির দিকে এগিয়ে এলো।

রনি কোনোরকমে নিজেকে ছাড়িয়ে দৌড়ে পালালো। গ্রামে ফিরে সে সবাইকে গল্পটা বলল। গ্রামের একজন বুড়ি এসে বলল, "তুই বেঁচে ফিরেছিস, এটাই অনেক। শ্যামলের আত্মা শান্তি পায়নি। সে মালতীকে খুঁজছে। কিন্তু মালতী তো অনেক আগেই মারা গেছে। তবু শ্যামলের আত্মা এই পুকুর ছেড়ে যায় না।"

রনি আর কখনো ওই পুকুরের ধারে যায়নি। কিন্তু তার ফোনে সেই ছবিটা এখনো আছে। আর প্রতি বৃষ্টির রাতে, সে একটা ফিসফিস শোনে— "মালতী কোথায় =)

Follow for More

Post a Comment

0 Comments