কবরস্থানের ছায়া । ভূতের গল্প

Vuter Image

কবরস্থানের ছায়া

শীতের এক কুয়াশাচ্ছন্ন সন্ধ্যা। গ্রামের পাশে একটা পুরোনো কবরস্থান আছে, যেখানে শতাব্দী প্রাচীন কবরগুলো মাটির সাথে মিশে গেছে। গ্রামের লোকেরা বলে, এই কবরস্থানে রাতের বেলা অদ্ভুত সব শব্দ শোনা যায়—কখনো কান্না, কখনো ফিসফিস, আবার কখনো হাসির আওয়াজ। কেউ কেউ বলে, এখানে একজন মহিলার আত্মা ঘুরে বেড়ায়, যার নাম ছিল কালীমা। সে নাকি তার স্বামীর হাতে খুন হয়েছিল, আর তারপর থেকে তার আত্মা শান্তি পায়নি।

এই গল্পের নায়ক হলো সোহান। সোহান একজন ফটোগ্রাফার, বয়স ২৮। সে তার ক্যামেরায় অতিপ্রাকৃত জিনিস ধরার শখ রাখে। তার এক বন্ধু তাকে এই কবরস্থানের কথা বলেছিল। সোহান ঠিক করল, সে এখানে রাত কাটিয়ে কিছু ছবি তুলবে। তার সাথে গেল তার ছোট বোন রিয়া, যে সবসময় সোহানের সাথে অ্যাডভেঞ্চারে যেতে পছন্দ করে।

ওরা সন্ধ্যার দিকে কবরস্থানে পৌঁছল। কুয়াশা এত ঘন ছিল যে হাতের আঙুল পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিল না। কবরস্থানের মাঝখানে একটা পুরোনো গাছ ছিল, তার নিচে একটা ভাঙা কবরের পাথর। সোহান ক্যামেরা সেট করতে লাগল, আর রিয়া টর্চ জ্বালিয়ে চারপাশ দেখছিল। হঠাৎ রিয়া বলে উঠল, "ভাইয়া, এই কবরের পাথরে কিছু লেখা আছে।" সোহান এগিয়ে গিয়ে দেখল, পাথরে খোদাই করা লেখা— "কালীমা, ১৮৫০-১৮৭৫। আমি ফিরে আসব।"

রাত গভীর হতে থাকল। সোহান কিছু ছবি তুলছিল, কিন্তু তার ক্যামেরায় বারবার একটা অদ্ভুত আলোর ছায়া ধরা পড়ছিল। সে ভাবল, হয়তো কুয়াশার কারণে আলোর প্রতিফলন হচ্ছে। কিন্তু রিয়া হঠাৎ চিৎকার করে উঠল, "ভাইয়া, ওই দেখ!" সোহান ফিরে তাকাতেই দেখল, কুয়াশার মধ্যে একটা ছায়া দাঁড়িয়ে আছে—একটা মহিলা, কালো শাড়ি পরা, তার মুখ দেখা যাচ্ছে না।

সোহানের হাত কাঁপতে লাগল, কিন্তু সে সাহস করে ক্যামেরা তুলে ছবি তুলল। ছবিটা দেখার পর ওরা দুজনেরই মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল। ছবিতে মহিলার মুখ ছিল না, শুধু একটা কালো ছায়া, আর তার হাতে একটা ছোট্ট ছুরি। রিয়া ভয়ে কাঁদতে শুরু করল, "ভাইয়া, চলো এখান থেকে!" কিন্তু সোহান বলল, "আরেকটু দেখি, হয়তো এটা আমাদের মনের ভুল।"

কিছুক্ষণ পরে, কুয়াশার মধ্যে থেকে একটা ফিসফিস ভেসে এলো— "তুমি আমার জিনিস নিয়েছ..." সোহান আর রিয়া চারপাশে তাকাল, কিন্তু কাউকে দেখতে পেল না। হঠাৎ তাদের পায়ের কাছে একটা শব্দ হলো—ঝুপ! একটা পুরোনো লকেট মাটিতে পড়ে আছে। সোহান লকেটটা তুলে দেখল, ভেতরে একটা মহিলার ছবি, আর তার নিচে লেখা— "কালীমা।"

এবার সোহানেরও ভয় লাগতে শুরু করল। ওরা দৌড়ে পালাতে গেল, কিন্তু কবরস্থানের গেট বন্ধ হয়ে গেছে। পেছন থেকে একটা হাসির শব্দ ভেসে এলো, আর কুয়াশার মধ্যে সেই মহিলার ছায়া আবার দেখা গেল। এবার তার হাতের ছুরিটা আরও স্পষ্ট। সোহান আর রিয়া গেটের উপর দিয়ে লাফিয়ে পালালো, আর পিছন ফিরে তাকাতেই দেখল, ছায়াটা ধীরে ধীরে কুয়াশায় মিলিয়ে যাচ্ছে।

গ্রামে ফিরে ওরা গল্পটা সবাইকে বলল। গ্রামের একজন বুড়ো বললেন, "কালীমার আত্মা তার লকেটটা খুঁজছে। ওই লকেটে তার স্বামীর খুনের রহস্য লুকিয়ে আছে। যে এটা নেয়, তাকে কালীমা ছাড়ে না।" সোহান লকেটটা ফিরিয়ে দিতে চাইল, কিন্তু সেটা আর তার কাছে ছিল না।

এরপর থেকে, প্রতি রাতে সোহানের ঘুমের মধ্যে একটা ফিসফিস ভেসে আসে— "আমার লকেট ফিরিয়ে দাও..."

Follow for More

 

Post a Comment

0 Comments