অভিশপ্ত রাব্বীর আত্মা
অমাবশ্যার রাত। কুসুমপুর ছোট্ট গ্রামটি সন্ধ্যা নামলে একদম নিস্তব্ধ হয়ে যায়।
এখন বাজে রাত একটা। তো এই সময় তো পুরো গ্রাম ধরতে গেলে ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে।
অন্ধকার রাত হওয়ার কারণে সবাই আগে থেকেই গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে যাই।
একটা বেজে দশ মিনিট,,,
হুট করে আচমকা একটা আলো এসে ঠিক গ্রামের মাঝ বরাবর এসে পড়লো। যার দরুণ আশেপাশে বাড়ি ঘরগুলোও বেশ আলোতে ছেয়ে গেল।
এরিমাঝে পুরো গ্রামবাসী সজাগ হয়ে উঠেছে। সবাই চুপটি করে বিছানায় আছে এর পরবর্তীতে কি হয় সেটার জন্য।
এরিমাঝে আবার হুট করে হাউমাউ করে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসলো।
সেই কান্নার তীব্রতা এতটা জটিল ছিলো যে পুরো গ্রামবাসী সাথে সাথে তাদের দরজা খুলে বাইরে বের হলো।
বাইরে বের হয়ে তো তাদের চোখ ছানাবড়া হয়ে যাবার উপক্রম। কারণ পুরো গ্রামের মাঝে আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কিছু সাদা রঙের অবয়ব। এমনি গঠন দেখে মনে হচ্ছে তারা একই রকমের গঠন।
একটা অবয়ব তার প্রতিচ্ছবি চারদিকে ছড়িয়ে আছে।
এইসব অবয়ব দেখে কারোও হুশ ছিলো না সেই কান্নার শব্দটার।
পুরো গ্রামবাসীকে দেখে কান্নার আওয়াজটা আরোও বেড়ে গেল।
কান্না করতে করতে সবার সামনে এক মহিলা এসে হাজির হলো আর কান্নায় বলতে লাগলো।
---আমার সেলিম রে ঐ খাইয়া ফেলাইছে। ঐ আমার পুলাটা রে খাইয়া ফালাইসে।
কেউ কেউ সেই মহিলাটার কথা বুঝলো না আবার কেউ বুঝলো।
যারা বুঝলো তারা এগিয়ে এলো সেই মহিলাটার কাছে। আর কি হয়েছে তা জানতে চাই।
সেই মহিলাটা কিছু বলছে তার আগেই গ্রামের সেই শুরুর প্রান্ত থেকে একটা ঘরের দরজা খুললো। দরজা খুলে বেশ জোড়ে জোড়ে মন্ত্র পড়তে লাগলো এক ব্যক্তি।
সেই মন্ত্র শুনে সবাই সেদিকে তাকালো।
হুট করে সেই অবয়ব গুলো আস্তে আস্তে করে উড়ে গিয়ে সেই ব্যক্তির কাছে মিলিয়ে গেল।
এরপর ধপাশ করে উপর থেকে একটা যুবকের মৃত দেহ মাটিতে পড়লো।
আর সেটা দেখে সেলিমের মা দৌড়ে সেই মৃত দেহটার কাছে গিয়ে কান্না করতে লাগলো।
সব গ্রামবাসী সেই দেহটার কাছে আসলো। সেটা আসলে সেলিমের লাশ ছিলো। সবাই বেশ লক্ষ্য করে দেখলো সেলিমের হাত পা গলা বেশ কিছু জায়গা থেকে কেটে কেটে দেওয়া।
এইবার কয়েকজন সেলিমের মাকে জিজ্ঞাসা করে কি ঘটেছিলো??
তখন সেলিমের মা বলতে শুরু করে।
ঐ বাড়ির ব্যক্তি সেলিমের মায়ের কাছে ছাগল চেয়েছিলো তো সেটা দিতে গিয়েছিলো সেলিম কিন্তু অনেক রাত হবার পরও সেলিম না ফিরলে তার মা দিশেহারা হয়ে খুঁজতে থাকে। আর সেই ব্যক্তিকে যে বলতে যাবে তার সাধ্য ছিলো না সেলিমের মায়ের।
সবাই সেলিমের মায়ের কথা শুনে বেশ ক্ষেপে গেল। তাই সবাই সেই বাড়িটার দিকে গেল।
সেই বাড়িটার দিকে আশেপাশে কেউ যাই না তেমন।
গ্রামবাসী বাড়িটার কাছে যেতেই হুট করে সেই বাড়িটার দরজা খুলে যাই আর একটা বাজে পচা গলা গন্ধ আসে।
যার দরুণ সবাই নাক ছিটকাই।
সেই ঘর থেকে বের হলো জীর্ণ শীর্ণ কালো ও গেরুয়া রঙের কাপড় পড়া একটা যুবক। বয়স হবে সাতাশ কি আঠাশ।
সেই যুবককে দেখে আবার অনেকে পেছনে সরে যাচ্ছিলো ভয়ে।
কারণ সে সম্পূর্ণ বাতাসের উপর ভেসে ছিলো।
একজন মুরুব্বী এসে সেই যুবককে বলতে লাগলো।। --রাব্বী কি হচ্ছে কি এইসব??
যুবকটির নাম হয়তো রাব্বী তাই সে নিজ ভঙ্গিতে সাড়া দিলো।
---কি হয়েছে? ?এত কৈফিয়ত দিতে হবে কেন???
রাব্বীর এই কথা শুনে একটা লোক এগিয়ে আসলে সে একদম থ হয়ে দাড়িয়ে থাকে কারণ রাব্বীর পেছনে রাব্বীর মৃত শরীর পড়ে আছে।
আর সেটা অর্ধ গলে গেছে।
লোকটা সেটা তাড়াহুড়া করে সবাইকে জানাই।
এইবার সবাই বেশ ভয় পেয়ে যাই। এরপর রাব্বী হাসতে হাসতে আর একটু বাতাসে উড়ে গিয়ে বলতে লাগলো।
---আমার সব কষ্ট স্বার্থক হয়েছে। আমি পেরেছি অঘরী তান্ত্রিক হতে।
এরিমাঝে একজন বলতে লাগলো।
---ছি ছি তুই এককালে কত মৌলভি ছিলি। কি নামায কালাম পড়তি। এখন তুই কিছু শক্তি পাওয়ার জন্য এইসব করতে শুরু করলি।
রাব্বীর চোখ লাল হয়ে গিয়েছে রাগে।
--আমি আমার নিজেকে বলি দিয়েছি। আর ঐ সেলিমের আত্মাকে টুকরো টুকরো করে কেটে বলি দিয়েছি। দুইটা প্রাণ গেছে এতে কি পরিশ্রম লাগে নি। যা ভালো ভালো ঠিক থাকতে চাইলে সব চলে যা। আর ভুলে এইদিকটাই আসবি না কেউ।
রাব্বীর এই কথা শুনে একজন মুরুব্বী রেগে গিয়ে আশেপাশে কিছু খুঁজতে গেলে তার চোখ যায় একটা হারিকেন এর উপর।
আর তিনি সেটা রাব্বীর দিকে ছুড়ে মারে।
যে রাব্বী কথা বলছিলো তিনি তো একটা অশরীরী তাই সেই হারিকেনটা পড়লো রাব্বীর দেহের উপর আর সেটা থেকে কেরোসিন তেল বের হয়ে আগুন ধরে যাই।
আর নিমিষেই সেটাই আগুন ধরে যাই আর হ্যাঁ সেখান থেকে পুরো বাড়িতে আগুন ধরে যাই।
গ্রামবাসী সবাই রাব্বীর পতন দেখছে। রাব্বীর অশরীরীটা আস্তে আস্তে করে মিলিয়ে যাচ্ছে কিন্তু যেতে যেতে বলে উঠলো।
---এত দিনের পরিশ্রম আমি বিফলে যেতে দিবো না। আমি আবার ফিরবো। আর সবাইকে ধ্বংস করে দিবো।
সমাপ্ত
0 Comments