অন্ধকারের ডাক। ভূতের গল্প

                                                       

অন্ধকারের ডাক

অন্ধকারের ডাক

পাহাড়ি গ্রাম কালিমাটি, যেখানে দিনের আলো যতটা উজ্জ্বল, রাত ততটাই ভয়াবহ। গ্রামের উত্তর দিকে একটি পুরনো মন্দির রয়েছে, যে মন্দিরকে ঘিরে বহু গল্প ছড়িয়ে আছে। কেউ বলে, মন্দিরে এক সাধু বাস করতেন, যিনি কালো জাদু চর্চা করতেন। কেউ বলে, সেখানে অশুভ আত্মাদের বন্দী রাখা হয়েছে। তবে গ্রামবাসীদের মধ্যে একটা কথা পরিষ্কার, সূর্য ডোবার পর ওই মন্দিরে কেউ যায় না।

গ্রামের এক যুবক, রায়হান, এসব গল্প বিশ্বাস করত না। তার মতে, মানুষই গল্প বানিয়ে ভয় তৈরি করে। কিন্তু এক রাতে তার জীবন পুরো বদলে গেল।

রহস্যের সূচনা

সেদিন পূর্ণিমার রাত ছিল। গ্রামের মানুষগুলো গভীর ঘুমে। রায়হান তার বন্ধুরা মিলে সিদ্ধান্ত নেয়, মন্দিরের ভেতরে গিয়ে পুরো জায়গাটা ঘুরে আসবে। বন্ধুরা প্রথমে দ্বিধায় ছিল, কিন্তু রায়হান তাদের সাহস দেয়।

রাত ঠিক বারোটায় তারা মন্দিরের গেটে পৌঁছায়। চাঁদের আলোতে মন্দিরের ধ্বংসপ্রাপ্ত কাঠামো ভুতুড়ে লাগছিল। গেটটা পুরনো, ভাঙাচোরা এবং মরচে পড়া। ভেতরে ঢুকতেই শীতল বাতাস তাদের শরীর ছুঁয়ে গেল। চারপাশে অদ্ভুত নীরবতা।

মন্দিরের মাঝখানে একটা প্রাচীন পাথরের বেদি। বেদির ওপর ছাইয়ের মতো কিছু পড়ে ছিল। এক বন্ধু সাহস করে ছাইয়ের ওপর হাত রাখতেই আচমকা একটা তীব্র ঝড় উঠল। বাতাসে ফিসফিসানির মতো আওয়াজ ভেসে এলো। “তোমরা এখানে কেন?”

আতঙ্কের বিকাশ

বন্ধুরা সবাই ভয় পেয়ে গেল। কিন্তু রায়হান বলল, “এসব আমাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা মাত্র। এগুলো কিছুই না।” ঠিক তখনই একটা বড় শব্দ হলো, যেন মন্দিরের ভাঙা দরজা নিজের জায়গা থেকে খুলে পড়ল। সবাই চমকে উঠে দেখল, দরজার পেছনে একটা ছায়ামূর্তি।

ছায়াটা ধীরে ধীরে তাদের দিকে এগিয়ে এলো। মূর্তিটার শরীর অস্পষ্ট, মুখের কোনো বৈশিষ্ট্য নেই। বন্ধুরা পালানোর চেষ্টা করল, কিন্তু দরজাটা বন্ধ হয়ে গেল। ছায়া বলল, “আমার জায়গায় এসেছো, এখন তোমাদের ছেড়ে যাব কেন?”

রায়হান সাহস করে বলল, “তুমি কে?”

ছায়া ধীরে ধীরে নিজের পরিচয় দিল। সে মন্দিরের পুরনো সাধু, যার কালো জাদু মন্দিরকে অভিশপ্ত করেছে। তার মন্ত্র বিদ্যা অসম্পূর্ণ ছিল, আর সেই অসম্পূর্ণতার কারণে সে অর্ধেক জীবিত, অর্ধেক মৃত অবস্থায় আটকে আছে।

“তোমাদের রক্ত আমাকে মুক্তি দিতে পারে,” ছায়া বলল।

মুক্তির সন্ধান

রায়হান তার উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে মন্দিরের কোণে রাখা পুরনো শিলালিপি দেখতে পায়। সেখানে লেখা ছিল, “অন্যায় ভাবে এখানে যারা প্রবেশ করবে, তারা শাস্তি পাবে। তবে সাহস এবং সততার সাথে প্রার্থনা করলে মুক্তি মিলবে।”

রায়হান মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে হাতজোড় করে প্রার্থনা শুরু করল। তার বন্ধুরাও ভয় কাটিয়ে তার সাথে যোগ দিল। ছায়া প্রথমে হাসল, কিন্তু ধীরে ধীরে তার রূপ পরিবর্তন হতে থাকল।

এক সময় ছায়াটা চিৎকার করে মন্দিরের ছাদ ভেদ করে অদৃশ্য হয়ে গেল। বন্ধুরা মন্দির থেকে দৌড়ে বেরিয়ে এলো।

শেষ কথা

এরপর থেকে রায়হান কখনো গ্রামবাসীর গল্প নিয়ে হাসাহাসি করেনি। সে বুঝেছিল, কিছু রহস্য প্রশ্ন না করাই ভালো। মন্দিরে আর কখনো কেউ যায়নি, তবে পূর্ণিমার রাতে এখনো মন্দিরের ভেতর থেকে মন্ত্রোচ্চারণের শব্দ ভেসে আসে।

Post a Comment

0 Comments