⛔⭕কূপে আত্মাদের কান্না ⛔⭕
লোককথা অনুসারে, গ্রামটির পাশের কূপটি মধ্যে অশরীরি আত্মার বাস । সেখানে যেই গিয়েছে, সে আর ফিরে আসেনি। মাঝরাতে সেই কূপ থেকে ভেসে আসে চাপা কান্নার শব্দ—শিশুর, নারীর, এবং এমন কিছু যা মানুষের নয়…
আজও কেউ সেই কূপের দিকে তাকালে দেখতে পায় ছায়ার ভেতরে লুকিয়ে থাকা কিছু অশরীরী অবয়ব, যেগুলো ধীরে ধীরে কাছে আসছে…
ইন্দোনেশিয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম সিয়ান্দা। জনসংখ্যা খুবই কম, চারদিকে শুধুই গভীর জঙ্গল। একসময় এখানে লোকসংখ্যা অনেক ছিল, কিন্তু একের পর এক অদ্ভুত নিখোঁজ ও রহস্যময় মৃত্যুর পর, অধিকাংশ মানুষ গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে।
গ্রামের একপাশে একটি পুরোনো কূপ ছিল, যা কালো পাথরের তৈরি। এর দেয়াল জুড়ে ছিল অদ্ভুত খোদাই করা চিহ্ন, যেগুলো স্থানীয়রা বলে "শয়তানের ভাষা"। কূপটি এতটাই গভীর ছিল যে নিচে তাকালে মনে হতো, সে এক চিরন্তন অন্ধকারের দরজা।
এই কূপের সবচেয়ে ভয়ংকর গল্পটি ছিল একটি ছোট মেয়ের—নাম রাতিহ।
২৫ বছর আগে, রাতিহ বিকেলে কূপের পাশে খেলছিল। তার মা এক মুহূর্তের জন্য চোখ সরিয়েছিলেন, আর তখনই রাতিহ অদৃশ্য হয়ে যায়।
তাকে হাজার খুঁজেও পাওয়া যায়নি। কূপের গভীরে নামানো হয়েছিল একটি টর্চলাইট, কিন্তু আলো তলদেশে পৌঁছায়নি। শুধু এক মুহূর্তের জন্য, কূপের ভেতর থেকে এক অদ্ভুত বিকৃত হাসির আওয়াজ ভেসে এসেছিল…সেই রাতের পর থেকে, কূপ থেকে মাঝে মাঝে শোনা যেতে থাকে এক ছোট মেয়ের কণ্ঠস্বর—
"মা… আমাকে ফিরিয়ে নাও…"
২০২৪ সালের জানুয়ারি।
জাকার্তা থেকে আসা একদল গবেষক আসে গ্রামে। তাদের নেতৃত্বে ছিল ড্যানি সুহার্তো, একজন বিখ্যাত পুরাতত্ত্ববিদ। তারা শোনে কূপের গল্প এবং স্থির করে, তারা কূপের রহস্য উদঘাটন করবে।
কিন্তু গ্রামবাসীরা ভয়ে তাদের নিষেধ করে।"এই কূপ অভিশপ্ত! এখানে আত্মারা বন্দি! যারা এর কাছে যায়, তারা আর ফিরে আসে না!"
কিন্তু ড্যানির দল এইসব কুসংস্কার বলে উড়িয়ে দেয়। তারা ক্যামেরা, ড্রোন ও রশির ব্যবস্থা করে। রাত ২টা ৩৪ মিনিটে তারা কূপের চারপাশে ক্যামেরা স্থাপন করে।এবং তারপর…
কয়েক সেকেন্ডের জন্য, ক্যামেরার ফুটেজে ধরা পড়ে কূপের ভেতর থেকে দুটি হাড়ের মতো হাত উঠে আসছে!
এরপরই ক্যামেরার স্ক্রিন কালো হয়ে যায়, আর শোনা যায় একসঙ্গে অনেকগুলো বিকৃত কণ্ঠের কান্ন।
পরদিন সকালে গ্রামবাসীরা দেখে, ড্যানির দলের দুজন নিখোঁজ! তাদের শেষ ভিডিওতে দেখা যায়, তারা কূপের পাশে দাঁড়িয়ে আছে, আর পিছন থেকে দুটি কালো ছায়া তাদের ঘিরে ফেলছে!
গ্রামবাসীরা কূপের দিকে তাকিয়ে দেখে, কূপের গায়ে রক্তের দাগ… আর পাশে পড়ে আছে একটি ছোট্ট মেয়ের পোশাক।
বৃদ্ধা গ্রামবাসী কেঁপে উঠে বললেন, "রাতিহ… সে ফিরে এসেছে…"সেই রাতেই শুরু হয় ভয়াবহ ঘটনা।
মধ্যরাতে গ্রামের বাড়ির জানালাগুলো নিজে থেকেই খুলে যায়। বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে কটু গন্ধ, যেন পুরোনো পচা মৃতদেহের গন্ধ।
কূপের আশেপাশে থাকা কয়েকটি ঘর থেকে শুরু হয় অদ্ভুত আওয়াজ—একসঙ্গে অনেকগুলো মানুষের ফিসফিসানি, বিকৃত হাসি, আর মাঝে মাঝে একটি শিশুর কান্না…
ড্যানির সহকারী রায়হান জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎই তার চুল খাড়া হয়ে যায়—কেননা জানালার বাইরে ছিল একটি মেয়ের অবয়ব, চোখ শূন্য, মুখে বিকৃত হাসি।সেই রাতেই রায়হান নিখোঁজ হয়ে যায়।
সকালে গ্রামবাসীরা কূপের পাশে গিয়ে দেখতে পায় তিনটি মৃতদেহ। তাদের মুখ আতঙ্কে বিকৃত, শরীর সম্পূর্ণ শুকিয়ে গিয়েছে, যেন কেউ তাদের থেকে সমস্ত জীবনশক্তি শুষে নিয়েছে!
কিন্তু সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার ছিল, কূপের দেয়ালে আঁকা একটি বার্তা, যা মানুষের হাতের লেখা নয়:-"আমি ফিরে এসেছি… এবার আর কেউ বাঁচবে না…"
সেদিন রাত থেকেই, গ্রামে আর কোনো আলো জ্বলছিল না। বিদ্যুৎ নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে যায়। বাতাসে মিশে ছিল ফিসফিসানি, যেন কেউ পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছে…
ড্যানি বুঝতে পারে, এখানে আর থাকা যাবে না। সে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু গ্রাম থেকে বের হওয়ার রাস্তায় দেখা যায়—একটি ছোট মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তার মাথা একপাশে কাত, ঠোঁটে বিকৃত হাসি…সে আস্তে আস্তে ড্যানির দিকে এগিয়ে আসে।
ড্যানি চিৎকার করতে গিয়েও পারে না। তার মুখ যেন এক অদৃশ্য শক্তি চেপে ধরেছে।
শেষ মুহূর্তে, তার গাড়ির রিয়ার-ভিউ মিররে দেখা যায়, পিছনের আসনে একটি কালো ছায়া বসে আছে—তার চোখের গর্ত থেকে কালো তরল গড়িয়ে পড়ছে…এবং তারপর ড্যানি আর কখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।তার গাড়িটি কূপের পাশে পাওয়া যায়, দরজা খোলা অবস্থায়, কিন্তু গাড়ির ভেতরে কেউ ছিল না।
কিন্তু সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার?ড্যানির ক্যামেরার শেষ রেকর্ডিংয়ে শোনা যায় একটি ফিসফিসানি—"তুমি দেরি করেছ… আমরা তোমাকে অনেকদিন ধরেই অপেক্ষা করছিলাম…"
আজও কেউ সেই কূপের পাশে দাঁড়ালে, গভীর রাতে এক অদৃশ্য শক্তি তার ঘাড়ের উপর হাত রাখে… এবং তারপর?
সে আর কখনো ফিরে আসে না…
0 Comments