⛔মতি পাগলা ⛔
গত বছরের কথা। এক শীতের রাতে আমার পোল্ট্রি ফার্মের খাবার শেষ হয়ে গিয়েছিল। বাধ্য হয়ে রাতেই কিশোরগঞ্জ শহর থেকে খাবার কিনতে বের হই। খাবার কিনে একটি মিনি ট্রাকে তুলে দিয়ে আমি মোটরসাইকেলে করে বাড়ির পথে রওনা দেই।
রাত তখন প্রায় ১টা। কুয়াশায় রাস্তার চারপাশ ঝাপসা হয়ে ছিল। হালকা ঠান্ডা বাতাস বইছিল, আর রাস্তা ছিল একেবারে ফাঁকা। কিশোরগঞ্জ-পাকুন্দিয়া সড়কের কালিকাপুর বটতলা মোড়ে পৌঁছাতেই আমার বাইক হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায়!
আমি অনেক চেষ্টা করলাম, কিন্তু কিছুতেই বাইকটি স্টার্ট নিল না। রাস্তার আশপাশে কোনো মানুষ নেই, শুধু কালিকাপুরের পুরনো বটগাছটি দাঁড়িয়ে আছে যেন কোনো অশুভ ছায়ার মতো। জায়গাটা নিয়ে অনেক কাহিনি শুনেছি, তবে সেদিন আমি নিজেই সেই ভয়ংকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলাম!
আমি বাইক ঠেলে নিয়ে বাড়ির পথে হাঁটতে শুরু করলাম। হঠাৎই মনে হলো, কেউ আমাকে অনুসরণ করছে। প্রথমে ভাবলাম এটা আমারই কল্পনা। কিন্তু ধীরে ধীরে পায়ের শব্দগুলো স্পষ্ট হতে থাকলো।আমি পেছনে তাকাতেই দেখলাম—একটি ছায়ামূর্তি ধীরে ধীরে আমার দিকে এগিয়ে আসছে! অন্ধকারের মধ্যে সেটির বিকৃত চেহারা আর রক্তের মতো লাল চোখ জ্বলজ্বল করছিল। মুহূর্তেই আমার শরীর ঠান্ডা হয়ে গেল।
আমি পিছু হটতেই সেটি বিকট শব্দে চিৎকার করে আমার দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ল! আমি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলাম, কিন্তু যতই দৌড়াই, সামনে যেন আরেকটি ছায়া তৈরি হয়! মনে হলো, চারপাশ থেকে একাধিক পিশাচ আমাকে ঘিরে ধরেছে!আমি রাস্তার এক পাশে গিয়ে পরপর কয়েকবার দোয়া পড়তে লাগলাম, কিন্তু ভয় এতটাই বেশি ছিল যে, মুখ দিয়ে শব্দ বের হচ্ছিল না! আমি বুঝতে পারছিলাম, আজ আমার বাঁচার কোনো উপায় নেই!
ঠিক তখনই দূর থেকে এক বিকট শব্দ শোনা গেল! যেন বজ্রপাতের গর্জন! আমি দেখতে পেলাম—একটি সাদা ঘোড়ার উপর একজন ব্যক্তি আসছেন। তাঁর সারা শরীর থেকে আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছিল। তিনি লম্বা দাড়ি, সাদা পোশাক, এবং মাথায় সাদা পাগড়ি পরিহিত। আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না—এটা কি সত্যি ঘটছে?!
তিনি এসে উচ্চস্বরে দোয়া পড়তে শুরু করলেন। মুহূর্তেই পিশাচগুলোর বিকট চিৎকার শুরু হয়ে গেল!একটি পিশাচ আমাকে আক্রমণ করতে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই সেই ব্যক্তি একদম ঝড়ের গতিতে ঘোড়া নিয়ে সামনে চলে এলেন। পিশাচটি এবার তাঁর দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ল! কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, তিনি কোনো ভয় পেলেন না! বরং হাতে থাকা একটি লাঠি দিয়ে পিশাচটির দিকে আঘাত করলেন।
লাঠির আঘাতেই পিশাচটি মুহূর্তের মধ্যে দাউদাউ করে জ্বলে উঠল! বাকি পিশাচগুলোও বিকট শব্দ করে অদৃশ্য হয়ে গেল! আমি তখনও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।তিনি আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললেন—"ভয় পেয়ো না, আল্লাহ তোমার সঙ্গে আছেন।"
এ কথা বলেই তিনি সাদা ঘোড়াটি ঘুরিয়ে নিয়ে কালো কুয়াশার মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেলেন!আমি তখনও হতভম্ব! কয়েক সেকেন্ড পর হঠাৎ আমার বাইকটি নিজে থেকেই স্টার্ট নিয়ে নিল! আমি দেরি না করে দ্রুত বাড়ির দিকে রওনা দিলাম।
পরদিন আমি এলাকার কিছু প্রবীণ লোকদের কাছে ঘটনাটি বললাম। তারা বললেন—"তুমি জানো না? ওই কালিকাপুর বটতলার জায়গাটি অভিশপ্ত! বহু বছর আগে সেখানে এক নরপিশাচ মানুষ খুন করত! সেই জায়গায় মতি পাগলা রহমতের দোয়া পড়ে পিশাচগুলোকে শিকলে বন্দি করে রেখেছিলেন! তাই যখনই কেউ বিপদে পড়ে, মতি পাগলা এখনও এসে রক্ষা করেন!"এ ঘটনার পর আমি আর কোনোদিন গভীর রাতে একা সেই পথ দিয়ে যাইনি।
এখন আমি বুঝতে পারি—মৃত্যুর পরও সত্যিকারের অলৌকিক শক্তি দিয়ে কেউ কেউ মানুষের কল্যাণে আসেন! মতি পাগলা ছিলেন তেমন একজন!
0 Comments