অভিশপ্ত জমিদার বাড়ি
অনেক বছর আগে, গ্রামের এক প্রান্তে ছিল একটি পুরনো জমিদার বাড়ি। এই বাড়ি নিয়ে মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত ছিল নানা রকম ভয়ংকর গল্প। শোনা যেত, প্রতি অমাবস্যার রাতে বাড়িটির ভেতর থেকে ভেসে আসে রহস্যময় সুর, কারও হাহাকার, আবার কখনও বাচ্চার কান্নার শব্দ। গ্রামের লোকজন রাত নামলেই সেই রাস্তা এড়িয়ে চলত। একদিন শহর থেকে আসা রোহান নামের এক তরুণ সিদ্ধান্ত নেয়, সে নিজে বাড়ির রহস্য উদঘাটন করবে। অমাবস্যার রাতে সে সাহস করে একটি লন্ঠন হাতে নিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করল। ঘরের দেয়ালজুড়ে ছিল ভাঙাচোরা ছবি, মেঝেতে ছড়িয়ে ছিল পুরনো আসবাবপত্রের ভগ্নাংশ। হঠাৎ, ঘরের এক কোণ থেকে যেন একটা ঠান্ডা বাতাস এসে রোহানের গায়ে স্পর্শ করল। লন্ঠনের আলো কাঁপতে কাঁপতে নিভে গেল। অন্ধকারের মধ্যে, সে দেখতে পেল একটি সাদা ছায়ামূর্তি ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে আসছে। রোহান ভয় পেলেও সাহস ধরে দাঁড়িয়ে রইল। ছায়ামূর্তিটি তার দিকে হাত বাড়াল, মুখে ছিল করুণ এক হাসি। হঠাৎ করে পুরো বাড়ি যেন কেঁপে উঠল। মাটির নিচ থেকে ভেসে এল মানুষের কান্না ও আর্তনাদের শব্দ। আর সেখান থেকে বেরিয়ে এল আরও অনেক ছায়ামূর্তি। রোহান দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে চেষ্টা করল, কিন্তু পেছন থেকে কেউ যেন তাকে শক্ত করে টেনে ধরল। কোনো রকমে প্রাণপণ চেষ্টায় সে বাইরে বেরিয়ে আসতে পারল। এরপর সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল। পরদিন সকালে গ্রামবাসীরা তাকে অচেতন অবস্থায় বাড়ির সামনের মাঠে পড়ে থাকতে দেখল। জ্ঞান ফেরার পর রোহান আর কখনও জীবনে ওই বাড়ির কথা মনে করত না। গ্রামের লোকজন বলে, সেই জমিদার বাড়িতে এখনো অমাবস্যার রাতে ভেসে আসে সেই করুণ সুর আর ছায়ামূর্তির কান্না।
0 Comments