সাদা শাড়ির মেয়ে | ভূতের গল্প

 


সাদা শাড়ির মেয়ে

রাত তখন প্রায় বারোটা। মফস্বল শহরের প্রান্তে অবস্থিত পুরনো জমিদার বাড়িটা একদম অন্ধকারে ঢাকা। অনেকে বলে, সেখানে রাতের বেলা এক সাদা শাড়ি পরা মেয়েকে দেখা যায়। কেউ আবার বলে, সে কেবল দেখা দেয় পূর্ণিমার রাতে।

রায়হান, শহরের কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, গল্পটাকে কেবল গুজব বলেই উড়িয়ে দিয়েছিল। বন্ধুরা চ্যালেঞ্জ করল, সাহস থাকলে জমিদার বাড়িতে রাত কাটিয়ে আসুক। রায়হান চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করল। ব্যাগে টর্চলাইট, কিছু খাবার আর মোবাইল ফোন নিয়ে বেরিয়ে পড়ল সে।

বাড়ির ভেতর ঢুকতেই একটা ঠান্ডা বাতাস যেন শরীরের ভিতর ঢুকে গেল। দেয়ালে জমে থাকা শ্যাওলা আর ছাদের ঝুলন্ত মাকড়সার জাল সব মিলিয়ে একটা ভয়ানক পরিবেশ তৈরি করেছিল। রায়হান মৃদু হাসলো। "ভয়ের কিছু নেই", নিজেকে বলল।

রাত গভীর হল। হঠাৎ করেই বাতাসের শব্দ থেমে গেল। নিস্তব্ধতা এতটাই গা ছমছমে ছিল যে নিজের নিঃশ্বাসের শব্দও বড় মনে হচ্ছিল। হঠাৎ কানে এলো একটা মৃদু হাসির শব্দ। মেয়ের হাসি। রায়হান টর্চলাইটটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখল চারপাশ। কেউ নেই।

তারপর আচমকা দৃষ্টির সামনে একটা সাদা ছায়া! মাটির কয়েক ইঞ্চি ওপরে ভাসছে। সাদা শাড়ি পরা এক মেয়ে। মুখটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল না, কিন্তু তার চোখ দুটো যেন জ্বলছিল অস্বাভাবিক এক আলোয়।

রায়হান প্রথমে জমে গেল। পা নড়ছিল না। মেয়েটি ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে এল। ঠান্ডা একটা বাতাস তার শরীরের চারপাশ ঘিরে ফেলল। গলা শুকিয়ে গেল রায়হানের।

মেয়েটি ফিসফিস করে বলল, "আমার ঘর থেকে কেন চলে এসেছো?"

রায়হান আর দাঁড়াতে পারলো না। দৌড়ে পালাতে চেষ্টা করল। কিন্তু আশ্চর্য! বাড়ির দরজা-জানালা সব বন্ধ হয়ে গেছে। সে বারবার চিৎকার করছিল, কিন্তু কোনো আওয়াজ যেন বেরোচ্ছিল না গলা থেকে।

মেয়েটি এবার একদম সামনে এসে দাঁড়াল। তখন তার মুখটা স্পষ্ট দেখা গেল—ভয়ংকর বিকৃত, মৃতদেহের মতো ফ্যাকাশে! চোখের কোটর যেন অন্ধকারের গর্ত!

সব কিছু ঝাপসা হয়ে গেল রায়হানের। পরদিন সকালে গ্রামের মানুষজন তাকে বাড়ির সামনে অচেতন অবস্থায় খুঁজে পায়। সে জ্ঞান ফিরে পেলেও কোনোদিন আর স্বাভাবিক হতে পারেনি। এখনো সে মাঝেমাঝি রাতে ঘুমের মধ্যে চিৎকার করে উঠে বলে, "সাদা শাড়ির মেয়ে আসছে!"

Post a Comment

0 Comments