কম্পিউটারের অভিশাপ
ঢাকার অদূরে একটি পুরোনো বাড়ি ছিল, যেখানে আগে এক প্রযুক্তিবিদের বসবাস ছিল। তার নাম ছিল রফিকুল ইসলাম। তিনি ছিলেন কম্পিউটার বিজ্ঞানী, তবে তার গবেষণা ছিল সাধারণ প্রযুক্তির সীমা ছাড়িয়ে — তিনি বিশ্বাস করতেন যে মৃত আত্মাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব একটি বিশেষ কোডের মাধ্যমে। বহু বছর ধরে তিনি একটি বিশেষ সফটওয়্যার তৈরি করছিলেন, যা কম্পিউটারের মাধ্যমে আত্মার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারবে।
এক রাতে, হঠাৎই তার মৃত্যুর খবর আসে — কাউকে কিছু না জানিয়ে, নিজের ঘরে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল রফিক। অগ্নিকাণ্ডের উৎস মেলেনি, তবে তার ডেস্কে তখনও চালু ছিল একটি পুরোনো কম্পিউটার — সবকিছু ধ্বংস হলেও সেই কম্পিউটার ছিল অক্ষত। মানুষ বলে, সে রাতেই রফিক শেষ কোডটি চালিয়েছিলেন, আর তখনই খুলে গিয়েছিল এক ভয়ানক আত্মিক দরজা।
বছর কয়েক পরে, শহরের এক তরুণ হ্যাকার, নাম নাজিম, সেই পুরোনো বাড়িতে চলে আসে অল্প ভাড়ায়। সে ইন্টারনেটে ঘাঁটতে ঘাঁটতে জানতে পারে, ওই বাড়ির আগের বাসিন্দা রহস্যজনকভাবে মারা গিয়েছিল। সে যতটা না ভয় পায়, তার চেয়ে বেশি আগ্রহ জন্মায় — বিশেষ করে রফিকের কম্পিউটারটা দেখে।
এক রাতে, নাজিম সেই পুরোনো কম্পিউটারটি চালু করে — মনিটরে ভেসে ওঠে সবুজ কনসোল স্ক্রিন আর কিছু পুরোনো কমান্ড ফাইল। একটি ফাইলের নাম ছিল: "soul.exe"। কৌতূহলে সে ফাইলটি চালায়।
এক মুহূর্তেই সব আলো নিভে যায়, শুধু কম্পিউটারের মনিটরে ভেসে ওঠে একটি বিভীষিকাময় মুখ — গহ্বরের মতো চোখ, যার ভেতরে ছিল হিপনোটিক ঘূর্ণি। কীবোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল এক কঙ্কালসদৃশ অবয়ব, যার আঙুলগুলো ধাতব নখের মতো লম্বা, আর যেটা টাইপ করছে দ্রুতগতিতে।
নাজিম হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। তার শরীর যেন অবশ হয়ে আসে। ওই কঙ্কাল সত্তা যেন তার চোখের ভেতর দিয়ে মন নিয়ন্ত্রণ করে নিচ্ছে। ভেতর থেকে এক ভয়ানক গলায় আওয়াজ আসে —
"আমি ফিরে এসেছি... এখন তুইই আমার কাজ শেষ করবি..."
তারপর? নাজিম নিখোঁজ হয়ে যায়।
লোকজন বলে, আজও রাত গভীর হলে, ওই পুরোনো কম্পিউটারের মনিটরে আলো জ্বলে ওঠে, আর কেউ একজন কীবোর্ডে কিছু টাইপ করছে। আর প্রতি বছর, ৩১ অক্টোবর, সেখানে নতুন এক তরুণ নিখোঁজ হয়ে যায়।
এই ছিল রফিকের কোডেড অভিশাপ — যার হাত থেকে মুক্তি নেই কারোর।
0 Comments